দেশি মুরগির ঔষধের তালিকাগুলো বিস্তারিত জানুন
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা হচ্ছে মুরগি পালন। আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন যারা নতুনভাবে দেশি মুরগির রোগ বালাই কম বলে দেশি মুরগি পালন শুরু করেছেন। কিন্তু দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে চিন্তার কোন কারন নেই আজকের পোস্টটিতে আমরা আপনাদের জন্য দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা ও দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরার চেষ্টা করব।
পোস্টসূচিপত্রঃএই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি দেশি মুরগির ওষুধের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব।তাই আপনি যদি সঠিক ওষুধের তালিকা মেনে দেশি মুরগি পালনে লাভবান হতে চান তাহলে আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমার পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আশা করি আপনি সঠিক ওষুধের তালিকা পেয়ে যাবেন এবং মুরগি পালনে লাভবান হবেন।
ভুমিকা
বাংলাদেশ যত উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে তত নতুন নতুন উপায়ে মানুষ শুরু করছেন মুরগির খামার। আর এই মুরগি পালনে লাভবান হওয়ায় মানুষ কৃষিকাজ ছেড়ে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলছেন তাদের নিজস্ব মুরগির খামার। তার পাশাপাশি সঠিক নিয়মাবলী মেনে চলে অল্প সময়ের মধ্যে ভালো অংকের টাকা লাভ করতে পারছেন।
আরো পড়ুনঃ ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা নতুন করে দেশি মুরগি পালন শুরু করেছেন। কিন্তু দেশি মুরগিকে কিভাবে অথবা কি নিয়মে ওষুধ প্রয়োগ করবেন সেই সম্পর্কে সঠিক তথ্য খুঁজে পাচ্ছেন না। দেশি মুরগির ওষুধের তালিকা তুলে ধরার চেষ্টা করব। মুরগি পালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ওষুধ এবং খাবার ব্যবস্থাপনা। আপনি যদি মুরগি পালনে লাভবান হতে চান তাহলে আমার পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
দেশি মুরগির ওষুধের তালিকা
মুরগি পালনে ওষুধ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মুরগিকে সঠিক সময় সঠিক ওষুধ না দিলে মুরগি অসুস্থ হওয়ার ভয় থাকে এবং মুরগির সঠিক ওজন পাওয়া যায় না। তাতে করে ব্যবসায় লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আমি নিচে দেশি মুরগির সঠিক ওষুধ তালিকা তুলে ধরলাম।
আমি উপরে দেশি মুরগির সঠিক ওষুধ তালিকা তুলে ধরেছি। উপরে আমার দেখানোর নিয়ম গুলো মেনে চললে আশা করি মুরগির সঠিক ওষুধ ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারবেন এবং মুরগি পালনে লাভবান হতে পারবেন।
বিষের সতর্কতা
ওষুধগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করবেন। একজন পশু ডাক্তারের প্রামর্শ নিয়ে তার কথা মত এবং নিয়মাবলী মেনে ঔষধের মাত্রা অনুযায়ী ব্যবহার করবে। ওষুধ মাত্রা বাইরে ব্যবহার করলে মুরগির বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন।
আবদ্ধ পদ্ধতিতে দেশী মুরগি পালন
দেশি মুরগির ভিটামিনের তালিকা
আপনি যদি আবদ্ধ পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন করে থাকেন তাহলে মুরগিকে অনেকগুলো ভিটামিন দিতে হয়। আর এই ভিটামিন দেওয়ার কারণে মুরগির ওজন এবং ডিমের পরিমাণ ঠিক থাকে। চলুন এবার দেশি মুরগির ভিটামিনের তালিকা দেখে নেয়া যাক।
আমি উপরে দেশি মুরগির ভিটামিনের তালিকা এবং প্রয়োগের মাত্রা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি উপরে দেখানো নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি মুরগির সঠিক ওজন এবং ডিমের ক্ষেত্রেও ভালো সুবিধা পাবেন। তাই অবশ্যই উপরে দেখানোর নিয়ম গুলো মেনে চলুন।
বিষের সতর্কতা
ওপরে দেখানো ভিটামিন গুলো ব্যবহার করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যবহার করবেন। অবশ্যই উপরে দেখানোর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবহার করবেন। অনিয়মিতভাবে ওষুধ অথবা ভিটামিন প্রয়োগ করলে এটি মুরগির বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করুন।
দেশি মুরগির রোগ ও চিকিৎসা
সাধারণত দেশি মুরগির বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। রোগের উপসর্গ হিসেবে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন, সাদা এবং পাতলা পায়খানা করা, মাথার ঝুঁটি শুকিয়ে যাওয়া, শরীর দুর্বল এবং সর্বশেষ মুরগী ঝিমিয়ে থাকা ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায়। চলুন এবার দেশী মুরগির বেশ কিছু রোগ জেনে নেয়া যাক।
রানীক্ষেত
সাধারণত একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক ভয়াবহ রোগ হচ্ছে রানীক্ষেত। এই রোগটি সাধারণত সংক্রমিত হয় নিউক্যাশল ডিজিজ ভাইরাস থেকে। মূলত এর প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় মুরগির ভয়াবহ শ্বাসকষ্ট। পরবর্তীতে মুরগির ঝিমাতে শুরু করে। এর পরবর্তীতে মুরগির শরীল ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে যায় এবং কোন কোন মুরগির ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
আরো জানুনঃ গরু মোটাতাজাকরণ ভিটামিন ঔষধের নাম
সাধারণত এই রোগটি একটি ভয়াবহ রোগ। মূলত ভয়াবহ বলার কারণ হচ্ছে এই রোগটি দেখা দিলে প্রায় 100 ভাগ মুরগি মারা যেতে পারে এবং যেকোনো বয়সের মুরগির এই রোগ দেখা দিতে পারে।চলুন এই রোগের চিকিৎসা দেখেনি।
রানীক্ষেত চিকিৎসা
রানীক্ষেত রোগ হলে যে খুবই ভয় পাবেন তার কোন দরকার নেই। মূলত এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া খুবই সহজ। এই রোগটি দেখা দিলে মুরগিকে ভ্যাকসিনেশন করালে মুরগি খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। তাই আপনি অবশ্যই এই রোগটি দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মুরগীকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবেন।
রক্ত আমাশয়
সাধারণত রক্ত আমাশয় একটি প্রোটোজোয়া জনিত রোগ। মূলত এই রোগের আক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় একদিন থেকে শুরু করে ৬০ দিন পর্যন্ত থাকে। মূলত কিছু কিছু ক্ষেত্রে সারা বছর এই রোগটি দেখা দেয় কিন্তু খুবই অল্প পরিমাণ। তবে বর্ষাকালে এই রোগের পরিমাণ অনেক আকারে বেড়ে যায়। এই রোগটি হলে সাধারণত সঠিক ওজন আসে না দেশি মুরগির। সঠিক ওজনের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে কম ওজন আসার কারণে খামারিরা অনেক লসের শিকার হয়ে থাকেন। চলুন এবার উক্ত রোগের চিকিৎসা দেখে নেয়া যাক।
রক্ত আমাশয় চিকিৎসা
সাধারণত এই রোগের চিকিৎসা হিসেবে এম্প্রলিয়াম জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। তাই এই রোগটি দেখা দিলে আপনি অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করেন। তাহলে আশা করি এর থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
গামবোরো
সাধারণত উক্ত রোগটিও একটি ভাইরাস জনিত রোগ। বিভিন্ন ভাইরাসের জন্য এই রোগের উদ্ভব হয়ে থাকে। সাধারণত এই রোগ প্রথমে মুরগির লোসিকা গ্রন্থি কে আক্রান্ত করে। সাধারণত এই ভাইরাস থেকে বলা হয় ইনফেকসাশ বারসাল ডিজিজ। সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোভ পেতে শুরু করে। এছাড়াও এই রোগে আক্রান্ত হলে মুরগির মৃত্যুর হার প্রাক 25 থেকে 30 পারসেন্ট হয়ে থাকে। সাধারণত এর আগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে দুই থেকে সাত সপ্তাহ বয়সের মুরগির।
গামবোরো চিকিৎসা
সাধারণত এটি ভাইরাসজনিত রোগ হওয়ার কারণে এই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে টিকা অথবা ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তবে মুরগির রোগটি দেখা দিলে অবশ্যই মুরগির ভ্যাকসিন সিডিউল মেনে চলতে হবে। এই রোগটি হলে আপনি বিশেষজ্ঞ পশু ডাক্তারের থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে ভ্যাকসিন অথবা টিকা দিবেন।
ফাউল কলেরা
সাধারণত ফাউল কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। মূলত এই রোগটির উদ্ভব হয় অপরিষ্কার পানি থেকে। এর আগে আক্রান্ত হলে মুরগির মারার সম্ভাবনা প্রায় ৪০ থেকে ৫০% পর্যন্ত হতে পারে। এক কথায় এটি একটি ভয়াবহ রোগ। এই রোগটি একটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে উদ্ভব হয় ব্যাকটেরিয়া টির নাম হচ্ছে, Pasteurella Matocida। মূলত এই রোগটি বেশিরভাগ দেখা যায় অতিরিক্ত গরমে। অর্থাৎ তাপমাত্রা বেশি পরিমাণে থাকলে এই রোগের উদ্ভব দেখা দেয়। চলুন এবার এই রোগের চিকিৎসা দেখে নেওয়া যাক।
ফাউল কলেরা চিকিৎসা
যেহেতু ফাউল কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ তাই এই রোগটি দেখা দিলে অবশ্যই মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াতে হবে। তবে আপনি চাইলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে টিকা অথবা ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে পারেন।
কৃমি সংক্রমণ
সাধারণত অন্য মুরগির তুলনায় দেশি মুরগির কৃমি সংক্রমণ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে। সাধারণত এই রোগের আক্রান্ত হলে মুরগির খাদ্যের প্রতি অরুচি চলে আসে। যার কারনে মুরগি পরিমাণ এর চেয়ে খাবার কম খেয়ে থাকে। আর এই রোগের কারণে মুরগির কাঙ্ক্ষিত ওজন পাওয়া যায় না। এছাড়াও সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাপার হল এই রোগ দেখা দিলে মুরগির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশেই কমে যায়। চলুন এবার এই রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
কৃমি সংক্রমণ চিকিৎসা
এই রোগের প্রধান চিকিৎসা হচ্ছে কৃমির ওষুধ। দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই মুরগিকে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। সেক্ষেত্রে এই রোগ দেখা দিলে আপনি বেশি স্বপ্ন ডাক্তারের পরামর্শে সঠিক কৃমির ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আশা করি উত্তর থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা নিয়ে সচরাচর জিজ্ঞাসা প্রশ্ন উত্তর FAQ
প্রশ্নঃ মুরগির কৃমির ওষুধের নাম কি?
উত্তরঃ লিভামিজল হাইড্রোক্লোরাইড,এলবেন্ডাজল,ফেনবেন্ডাজল এবং আইভারমেকটিন,পাইপারজিন সাইট্রেট ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ রোগ মুরগির জন্য কোন ভেষজ গাছ ভালো?
উত্তরঃ ওরেগানো।
প্রশ্নঃ মুরগির রোগের প্রাকৃতিক চিকিৎসা?
উত্তরঃ ঘৃতকুমারী ও ওরেগানো।
প্রশ্নঃমুরগির ফিতা কৃমির চিকিৎসা?
উত্তরঃভালবেজেন (অ্যালবেন্ডাজল) ½ সিসি থেকে প্রমিত আকারের (¼ সিসি থেকে ব্যান্টাম জাতের) মুরগির মুখে দেওয়া হলে আশা করি ফিতা কৃমি দূর হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ মুরগির কি রোগ হয়?
উত্তরঃ মুরগির বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে যেমন,
- রক্ত আমাশয়
- ফাউল ফক্স
- রানীক্ষেত
- সংক্রামক ব্রংকাইটিস
- সর্বশেষ কৃমি সংক্রমণ ইত্যাদি
শেষ কথা
এই সম্পূর্ণ পোস্টটি জুড়ে আমি দেশি মুরগির ঔষধের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার পর যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করুন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য পেতে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। সর্বশেষ সম্পূর্ণ পোষ্টটি পড়ার পর আপনার মতামত কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url